বিনোদন দুনিয়া এখন রীতিমতো ’ফিফটি শেডস অব গ্রে’ জ্বরে ভুগছে। এবারের ভ্যালেনটাইনস ডে তে মুক্তি পাবার পর থেকে আন্তজার্তিক মুভি ফোরাম, ওয়েব সাইট আর বিনোদন পত্র-পত্রিকাগুলোতে এই মুভিটা নিয়ে এত বেশী সংবাদ, রিভিউ, আলোচনা-সমালোচনা আর মকারি হচ্ছে যে, সবগুলো পড়া দূরে থাক চোখ বুলিয়েও শেষ করা সম্ভব না।
এই মুভিটা নিয়ে আমি নিজেও অত্যধিক ’উত্তেজিত’। দুষ্টুমতি পাঠকদের জন্য বলছি, এই কাদের মোল্লা যেমন সেই কাদের মোল্লা নয় তেমনি এই উত্তেজনা সেই উত্তেজনা নয়। এই উত্তেজনা হচ্ছে, উপন্যাসের ট্রিলজিটা পড়ে শেষ করার পর সেইটা নিয়ে এই BDSM ঘরানার মুভিটির ভিজুয়ালাইজেশন কেমন হয়েছে, সেটা দেখার উত্তেজনা। ইয়ে, এক কথায় BDSM হচ্ছে, সঙ্গীকে যৌন নির্যাতন করতে করতে যৌনক্রিয়া করা। যারা বিস্তারিত জানতে চান তারা এখানে যেতে পারেন।
প্রসংগত উল্লেখ্য, তিন পর্বে সমাপ্য যে উপন্যাসটি অবলম্বনে মুভিটা বানানো হয়েছে, সেটা পৃথিবীর স্মরন কালের অন্যতম বেষ্ট সেলার। এমনকি জে কে রাউলিংয়ের হ্যারি পটারের চাইতেও অনেক বেশী! এই উপন্যাসটি সারা পৃথিবীতে বিক্রি হয়েছে প্রায় ১০ কোটি কপি। ইয়েস, সংখ্যাটা ভুল পড়েননি আপনি। দশ কোটি কপি!!! আর অনূদিত হয়েছে পৃথিবীর ৫৩ টি ভাষায়।
এই উপন্যাসের লেখিকার নাম ই. এল. জেমস (বিট্রিশ সিটিজেন)। যদিও নাম শুনে অনেকেই ইনাকে প্রথমে পুরুষ বলে ভ্রম করেছেন।
মুভির ট্রেইলার দেখে খুবই হতাশ হয়েছি। কারন মুভিতে যাকে ক্রিশ্চিয়ান গ্রে হিসেবে দেখানো হয়েছে, উপন্যাসটি পড়ার সময় আমার কল্পনার গ্রের সাথে তার বিন্দু বিসর্গও মিল নাই। এই ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছি না কিছুতেই। জেমি ডোরনানকে একদমই বাচ্চা পোলাপান লেগেছে মুভিতে। অথচ উপন্যাসের গ্রে অনেক বেশী ম্যাচিউরড এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন একজন পুরুষ, সুতরাং আমরা ধারনা, ব্রেডলে কুপার যদি গ্রে’র চরিত্রে অভিনয় করতো, অনেক বেশী স্বস্তি পেতাম। ট্রেইলারঃ
মুভির দৃশ্যায়ন, সিনেমাটোগ্রাফি আর মিউজিক এক কথায় অসাধারন। এই মুভির সাউন্ডট্র্যাক দিয়ে বানানো মিউজিক ভিডিও। (নন-অফিসিয়াল মিউজিক ট্র্যাক এলি গ্যলডিং এর মিউজিক ভিডিওর লিংক পোষ্টের শেষে দেয়া হয়েছে, শুনে এবং দেখে অনাবিল আরাম পেয়েছি।) ইউটিউবে ফুল অডিও ট্র্যাক।
মজার ব্যাপার হলো, BDSM নিয়ে মুভি এই পর্যন্ত কম হয়নি। তাহলে এটা হৈ চৈ ফেলে দেবার কারন কি?
কারনটা খুব সম্ভবত এই যে, এটার মশলাদার চরিত্র (নিতান্তই সাধাসিধা একটা তরুনী কলেজ গ্রাজুয়েটের সাথে সেইরাম ড্যাশিং বিজনেস ম্যাগনেটের শরীরি ও অশরীরি প্রেম), কাহিনীর গভীরতা, টুইষ্ট এবং অতি অবশ্যই, আদিরস; যেটাতে শুরুর দিকে প্রাসংগিকতা থাকলেও পরবর্তীতে মুটামুটি উন্নত সাহিত্যভাষার কারনে ’অভিজাত শ্রেণীর চটি’ ফ্যান্টাসিতে রূপ নিয়েছে। যেখানে অসম এবং উথাল পাতাল ভালবাসার সমান্তরালে আছে বিকৃত যৌনাচার এবং মর্ষকাম। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে, এই বিকৃত যৌনাচার এবং মর্ষকাম না থাকলে এই প্লটে আরো অনেক চমকপ্রদ একটা প্রেমের গল্প পাঠক/দর্শক পেতে পারতো।
মূলতঃ এখান থেকেই নিরীহ ও গোবেচারী এন্যাসথাসিয়া ষ্টিলের সর্বনাশের শুরু…
আবার বেশকিছু মানুষ হুজুগেও মেতেছে। মানে সবাই দেখেছে, সবাই এইটা নিয়ে বলা বলি করছে, তাই আমারও দেখা দরকার – এই কারনেও এর জনপ্রিয়তা বেড়েছে/বাড়ছে।
ধান্ধাবাজ ব্যবসায়ীরাও যথারীতি ব্যবসার পসার খুলে বসেছে এই চান্সে
আমি গত কয়েকদিনে আগ্রদ্দীপক কিছু বিষয় পেয়েছি মুভিটার ব্যাপারে। যেমনঃ
ক. এই মুভির কারনে সমাজের উপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক ইফেক্টঃ একদম রিয়েল লাইফ কেস স্টাডি!
খ. লন্ডনে এই মুভির প্রিমিয়ারে ন্যাক্কারজনক ঘটনা…
গ. এবং মেক্সিকোতে ততোধিক ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। এইরকমটাও ঘটতে পারে??! [অপ্রাপ্তবয়স্কদের এই লিংকে ক্লিক না করার জন্য উপদেশ দেয়া হলো]
ঘ. এটাও হাইলি এডাল্ট লিংক। প্রাপ্তবয়স্করাও নিজ দায়িত্বে ক্লিক করবেন। মুভির কিছু দৃশ্যকে যে মুটামুটি নারীর প্রতি সহিংসতার (এইটা নিয়ে বহু মিটিং-মিছিলও হয়েছে। বিস্তারিত এখানে) পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, নারীবাদীরা সেটার কমিক ভিজুয়ালাইজেশন বলতে পারেন।
ঙ. উপন্যাস/মুভিটির যে ব্যাপারগুলো হয়তো আপনি জানেন না।
চ. ফিফটি শেডস অব গ্রে’র সেরা ১০টি সংলাপ (যেগুলো নারীদের কাবু করে দিতে পারে বলে দাবী করা হয়েছে!)
ছ. মুভি নিয়ে একটা অমানুষিক স্যাটায়ার। এটা পড়ে আমি হাসতে হাসতে বেশ কয়েকবার বিষম খেয়েছি।
জ. সবশেষে, অনলাইন ও অফলাইনের যেখানে যত রিভিউ হয়েছে এই মুভিটিকে নিয়ে, তার একটি ক্ষুদ্রাংশ।
মুভির কিছু কিছু দৃশ্য যে মিউজিক ভিডিওতে ব্যবহার করা হয়েছেঃ
’ফিফটি শেডস অব গ্রে’ এর খুব প্রিয় একটি সংলাপঃ
“Having the thought of you being with someone else is like a knife twisting in my dark soul”– Christian Grey